শনিবার, ০৪ মে ২০২৪, ০৭:৫৬ অপরাহ্ন

স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে অসুস্থ শিশুকন্যাকে খালে ছুড়ে মারল বাবা!

 

আকিকুর রহমান রুমন:- হবিগঞ্জে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া করে ১৫ মাসের অসুস্থ শিশুকন্যা এ্যানিকে খালে ছুড়ে হত্যা করেছে পাষণ্ড বাবা ইমরান আহমেদ।

গত ৩০ জানুয়ারি সকালে খবর পেয়ে শিশু এ্যানির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় শিশুটির ট্রাকচালক বাবা ইমরান আহমেদ ও ট্রাকের হেলপার বাদলকে আসামি করে হত্যা মামলা করেছেন শিশু এ্যানির মা ইয়াসমিন বেগম। অভিযুক্ত সিলেটের সারিঘাট এলাকার বাসিন্দা ইমরান আহমদ পেশায় ট্রাকচালক।

মামলার বাদী জানান, তিন বছর আগে জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার গর্দান গ্রামের স্বামী পরিত্যক্তা ইয়াসমিনকে বিয়ে করেন ইমরান আহমদ। ইয়াসমিনের আগের স্বামীর ঘরে সাফি নামে ৩ বছরের এক ছেলে রয়েছে। ইমরানের সঙ্গে বিয়ের ৩ বছরের সংসার জীবনে তাদের মেয়ে এ্যানির জন্ম হয়। কিন্তু স্বামী–স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ দেখা দিলে কয়েক মাস আগে ইয়াসমিনকে তালাক দেন ইমরান।

পরে স্থানীয় মুরব্বিদের মধ্যস্থতায় মেয়ের ভরণপোষণের জন্য প্রতি মাসে ইয়াসমিনকে ২ হাজার টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নেন তিনি। সে অনুযায়ী ট্রাকচালক ইমরান মাসে মাসে এই টাকা দিয়েও আসছিলেন। সম্প্রতি এক মাসের টাকা দিতে দেরি হওয়ায় গত ২৯ জানুয়ারি ইয়াসমিন তার প্রাক্তন স্বামী ইমরানের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। একইসঙ্গে শিশুকন্যার অসুস্থতার কথা জানান।

মেয়ের অসুস্থতার খবরে ইমরান নিজে এসে সন্তানকে চিকিৎসা করাবেন বলে জানান। তার কথা অনুযায়ী গত ২৯ জানুয়ারি সিলেটের শাহপরাণ থানার দাসপাড়া এলাকায় ছেলে-মেয়ে নিয়ে অবস্থান করছিলেন ইয়াসমিন। ওইদিন রাত আনুমানিক ৯টার দিকে চিকিৎসককে দেখানোর নামে ইমরান ইয়াসমিন ও দুই সন্তানকে ট্রাকে তুলে নেন। এসময় বাদল নামে ট্রাকে এক হেলপারও ছিল।

ইয়াসমিন পুলিশের কাছে দাবি করেন, ট্রাক চালানো অবস্থায় ইমরানের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে প্রায় ৮০ কিলোমিটার গাড়ি চা‌লি‌য়ে গভীর রাতে হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং উপজেলার কাগাপাশা ইউনিয়নের কাগাপাশা বাজারের পশ্চিমে একটি ব্রিজের কাছে ট্রাক থামান ইমরান। এরপর ইয়াসমিনের কোলে থাকা অসুস্থ শিশু এ্যানিকে কেড়ে নিয়ে ট্রাক থেকে ব্রিজের নিচে খালে ফেলে দেন। শিশুপুত্র সাফিকেও ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করেন তিনি। হাত-পা ধরে সাফিকে রক্ষা করেন ইয়াসমিন। একপর্যায়ে সন্তানের শোকে ইয়াসমিন অজ্ঞান হয়ে যান। ওই সময় তারা কোথায় অবস্থান করছিলেন তিনি তাও জানতেন না।

ইয়াসমিন জানান, ভোরে সিলেটের টিলাগড় এলাকায় ইয়াসমিন ও তার ছেলেকে নামিয়ে ট্রাক নিয়ে পা‌লি‌য়ে যান ইমরান ও হেলপার বাদল। তিনি এই ঘটনাটি জানাতে সিলেটের শাহপরান থানায় গেলে পুলিশ তা আমলে নেয়নি।

এদিকে গত ৩০ জানুয়ারি সকালে খবর পেয়ে শিশু এ্যানির মরদেহ উদ্ধার করে বানিয়াচং থানা পুলিশ। ওই সময়ে তার পরিচয় না পাওয়ায় মরদেহটি ময়নাতদন্তের জন্য হবিগঞ্জ সদর আধুনিক হাসপাতালে পাঠানো হয়। একদিন একরাত মরদেহটি মর্গে রেখে পরদিন গত (৩১ জানুয়ারি) বুধবার ময়নাতদন্ত শেষ করে পুলিশ।

পরে বেওয়ারিস হিসেবে আঞ্জুমানে মফিদুল ইসলামের কাছে হস্তান্তর করা হলে প্রতিষ্ঠানটি হবিগঞ্জ কবরস্থানে শিশুটিকে দাফন করে। এ ঘটনায় কাগাপাশা ইউপি চেয়ারম্যান এরশাদ আলীর সহযোগিতায় শিশু এ্যানির মা ইয়াসমিন ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বানিয়াচং থানায় ঘাতক ট্রাকচালক সাবেক স্বামী ইমরান আহমেদ ও হেলপার বাদলকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা ক‌রেন।

বানিয়াচং থানার ওসি মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসাইন বলেন, ঘাতক বাবা ইমরানসহ হেলপার বাদলকে গ্রেফতারে কাজ করছে পুলিশ। ঘটনার সময় ব্যবহৃত ট্রাকটি জব্দও করা হবে।

 

এই নিউজটি আপনার ফেসবুকে শেয়ার করুন

© shaistaganjerbani.com | All rights reserved.